শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন
ধারাবাহিক সাড়াদেশ অনুসন্ধান –
৩য় পর্ব
পঞ্চগড় জেলার এই অঞ্চলের আদি বাসিন্দাদের জীবণাচারণ সহজ সরল । নারীরা অগ্রসর । বেশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তারা দূরের স্কুল কলেজে পড়তে যায় । পয়ারিবারিক ভাবে অনেক ক্ষেত্রেই আয় প্রবনতা চাষাবাদ এবং ফসলেই সীমাবদ্ধ । পুরুষেরা মাঠে কাজ করলেও নারীরা পিছিয়ে নেই সে ধারায় । তাদের কেউ কেউ মাঠেও দাপিয়ে বেড়ায় , সাথে বাড়ীর আশপাশে তরি-তরকারী এবং গবাদিপশু পালণ করে বাড়তি আয়ের সংস্থান করে । ফলে তাদের অর্থনীতি কৃষিতেই সীমাবদ্ধ ।
সাম্প্রতি আমাদের অনুসন্ধানী টিম গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে যে চিত্র দেখেছে তা আশাব্যঞ্জক বটে । গত পনর / বিশ বছর আগে যেখানে মানুষের সাথে অভাব জেঁকে থাকত সেখানে নিরবেই এক বিপ্লব ঘটে গেছে । মাঠের পর মাঠ ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে উঠেছে চা বাগান এবং অন্য ফসলের ক্ষেত । মাঝে মাঝে করল্লা বরজ । ঝাংলায় ঝুলে থাকা নানান সাইজের করল্লা সবজি বর্ষায় চোখ টেনে নেবে যে কারো ।
এই একাধিক ফসলের উৎপাদনের বহুমাত্রিক আচার নিয়ে আমাদের কথা হয় এলাকার চাষী নিপেন এর সাথে । নিপেন জানায় , আগে এক বা দুই ফসলী আবাদ হওয়ায় অভাব ঝেঁকে থাকত শ্রাবণ,আশ্বিণ ও কার্তিক মাস । অভাবে গরু-ছাগল থেকে শুরু করে পানির দামে বিক্রী করে চলতে হতো । ফসল ক্ষেতে থাকতেই পানির দামে তা বিক্রী করে দিতে হতো পরিবারের আহারের জন্য । এখন আর সেই অবস্থা এখানে নেই । প্রায় সবাই সেই অবস্থা থেকে উত্রে গেছে । যার কৃতিত্ব কৃষকেরা দিতে চান মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা কে । তিনিওই উপদেশ দিয়েছিলেন চা উত্পাদনের ব্যপকায়ন করতে । ধানের পাশাপাশি সাথে কয়েকটি ফসল যেমন চা, অন্যান্য সবজি ও ভুট্টা উত্পাদনের উদ্যোগ নিতে । যা বর্তমানে কার্যকর হয়ে অভাব পালিয়েছে । যে কেউ চাইলেই ঘর থেকে নগদ টাকা বেড় করে দিতে পারে এক লক্ষ বা পঞ্চাশ হাজার । আমাদের টিম ক্রাইম অনুসন্ধানে গেলেও এই বিষয়টি নিয়ে মাননীয় রেলমন্ত্রীর দৃষ্টিকর্ষণ করে তিনিও জানান এর পেছনে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা অবস্মরনীয় । তার ইচ্ছায়ই মূলত চা , ভুট্টা ও সবজি চাষে ব্যপকতা পেয়েছে ।
চা নিয়ে আমাদের প্রতিনিধি কৃষক এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধীদের সাথেও কথা বলেছেন । তারা এবং চা চাষীরা জানান, চা চাষে ব্যপকতা পেলেও চা পাতা ক্রয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে বলে তারা জানান । ফলে ন্যয্য মূল্য পাচ্ছে না চাষীরা । এই নিয়ে কৃষকরা আন্দোলোনের ডাক দিয়ে কিছুদিন আগে মানব বন্ধনও করেছে বলে জানা যায় । এই বিষয়ে আমাদের টিম কথা বলেছে নানান পক্ষের সাথে । কৃষকদের অভিযোগের পর আমরা উপস্থিত হয়ে ছিলাম বোদা উপজেলা চেয়ারম্যান ধ্যাপক ফারুক আলম টবি’র কাছে । তিনি ন্যয্য মূল্য না পাওয়ার বিষয়টির সততা নিশ্চিত করেন । তিনি আরও জানান উপড়ের মহলের দৃষ্টিকর্ষণও করা হয়েছে বলে জানান । আমাদের টিম চা বোর্ড পঞ্চগড় প্রতিনিধি ডঃ শামীম আল মামুনের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারে । যেই প্রক্রিয়ায় চা গাছের পরিচচর্যা নেওয়া উচিত তা এলাকায় নতুন চা চাষ শুরু হওয়ায় চাষীরা এখনো অভিজ্ঞ হয়ে উঠেনি । চা পাতা তুলতে নিয়ম-কাণূন তারা পরিপূর্ন মানছেন না অনেকেই । ফলে মানের একটু ঝামেলা হচ্ছে বলে তিনি জানান । তিনি আশা করেন দ্রুতই সমজ্ঞাণে চা চাষ বিস্তার লাভ করবে এবং মান অক্ষুন্ন থাকবে ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন চা চাষীরা দর নিয়ে কারসাজীর অভিযোগ করছেন আমাদের টিমের কাছে । এই দর নির্ধারণ করে এমনদের মধ্যেই “একটা কিছু ” হয় বলে ধারণা তাদের । যার ফলে তারা নিজেদের কাঁচা চা পাতার মূল্য পায় না বলে মনে করে চাষীরা । চা চাষে বিপ্লব ঘটলেও পরিস্থিতি অনুযায়ী মান অক্ষুন্ন রাখতে না পারা, সীমান্তে বর্ডার বাজারকেই দুষছে ফ্যাক্টরী মালিকরা । সেখানে নিম্ন মানের ভারতীয় চা বিক্রী হচ্ছে কেজীতে ৬০/৭০ টাকা কম দামে । আমাদের দেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা তা এনে ছড়িয়ে দিচ্ছে সর্বত্র । চা ফ্যাক্টরী এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন এমন তথ্যই দিয়েছেন আমাদের ।
উল্লেখ্য যে চা চাষী, চা ফ্যাক্টরী মালিকদের সংগঠন এবং সরকারী সংস্থার সমন্ব্য়ে “চা পাতার মূল্য নির্ধারনী কমিটি”র সভাপতি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন । আমাদের টিম যোগাযোগ করে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিনের সাথে । তিনি জানান, সকল পক্ষের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চা চাষের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে স্থানীয় ভাবে তাঁদের যতটুকু সম্ভব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন এবং কিছু বিষয় যা তাঁদের পক্ষে সমাধান সম্ভব নয় , তা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে ইতিমধ্যেই অভহিত করেছেন বলে তিনি আমাদের অনুসন্ধানী টিমকে জানান ।
পঞ্চগড় জেলার এই সবুজ সতেজে মিশে থাকা সাধারণ মানুষগুলো , যাদের মধ্যে ধর্ম-বর্ণ এবং রাজনীতির ভেদা-ভেদ তেমন নেই । আছে শুধু কিছু চিহ্নীত সন্ত্রাসী চক্র। যাদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে নিরহ মানুষগুলো দীর্ঘদিন যাবত । যাদের পুষে রাখছে এক শ্রেণীর –
চলবে –
( বিঃদ্রঃ – ভিডিও সহ ডকুমেন্টারী আসছে )